ওয়ারিশ সনদ একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দলিল। এটি মূলত তার উত্তরসূরি বা ওয়ারিশগণ কারা তা প্রমাণ করে এবং ভবিষ্যতে সম্পত্তি বণ্টন, জমির নামজারি, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন অথবা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাগজপত্রে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
ওয়ারিশ সনদ সাধারণত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদান করা হয়। সনদটি পাওয়ার জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। আবেদনকারীর সঙ্গে মৃত ব্যক্তির নাম, তার মৃত্যুর তারিখ, ওয়ারিশদের নাম, বয়স, ঠিকানা, এবং মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। সেই সঙ্গে আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশদের পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়।
আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার বা কাউন্সিলর কর্তৃক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সুপারিশ করা হয়, যার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সনদ প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে সম্পত্তির আইনি বণ্টন এবং অধিকার স্থাপন করা হয়।
ওয়ারিশ সনদ শুধুমাত্র পরিবারিক উত্তরাধিকার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় না, বরং এটি আদালতেও একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন কিংবা কোম্পানি শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও এটি অপরিহার্য। অতএব, মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরিরা যেন দ্রুত এবং সঠিকভাবে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করেন, তা নিশ্চিত করা উচিত।
উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাগরিক জীবনের আইনি দিক ও সম্পত্তি বণ্টনে ওয়ারিশ সনদ একটি অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা প্রতিটি উত্তরাধিকারীর প্রয়োজনীয়তার তালিকায় থাকা উচিত।





